Rabindranath Tagore: 'তুমি রবে নীরবে'... গানে-গানে, কবিতায় কবি স্মরণ

বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণের এই দিনেই কবির সবচেয়ে প্রিয় ঋতুতে নির্বাপিত হয়েছিল তাঁর জীবনপ্রদীপ।

Rabindranath Tagore: 'তুমি রবে নীরবে'... গানে-গানে, কবিতায় কবি স্মরণ
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইভ টিভি ডিজিটাল:  'জীবন-মরণের সীমানা ছাড়িয়ে, বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে'। জীবনকে জীবনের মতো করেই দেখতে ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। দীর্ঘ জীবনের ব্যথা-বেদনা, সাংসারিক কর্তব্য, জমিদারির তদারকি সামলে যে মানুষটা নিরলসভাবে লিখে গেলেন আজ তাঁর মৃত্যু দিন। আজ ২২শে শ্রাবণ। এমনই এক বর্ষণমুখর বাদর-ও দিনে নির্বাপিত হয়েছিল কবির জীবনপ্রদীপ।  মৃত্যুর শোক তাঁকে স্পর্শ করেছে এক ভিন্ন আঙ্গিকে। ঠিক যেভাবে আগুনের প্রবল উত্তাপে লোহা নিজেকে আরও দৃঢ় করে তোলে। তাই মৃত্যুঞ্জয়ীর জয়গান করে গিয়েছিলেন আজীবন। আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। 

বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণের এই দিনেই কবির সবচেয়ে প্রিয় ঋতুতে নির্বাপিত হয়েছিল তাঁর জীবনপ্রদীপ। সকলকে কাঁদিয়ে তাঁর এমন প্রস্থানে শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সেদিন কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন, ''দুপুরের রবি পরিয়াছে ঢলে.. অন্ত পারে কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে''। কবিদেরও কবি ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যিনি মৃত্যুকে বন্দনা করেছিলেন। আর তাই আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে নাচে-গানে, কবিতায় চলছে রবি কবিকে স্মরণ। 

 নিরাকারবাদী ঈশ্বরকেই জীবনদর্শন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবন তরী যে ঘাটের শেষ সীমানায় উপস্থিত তা হয়তো বুঝেছিলেন তিনি। অসুস্থ শরীরে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় আসার পর বুঝেছিলেন এবার হয়তো সাবধানের কোনও মার নেই, মারেরও হয়তো কোনও সাবধান নেই। অস্ত্রোপচারে সায় ছিল না কবির। কিন্তু সকলের মতের বিরুদ্ধে মত রাখার শারিরিক অবস্থা ছিল না। রানী চন্দ এবং প্রশান্ত মহলানবিশের স্ত্রী নির্মলকুমারী মহলানবিশ ছিলেন তখন কবির কবিতা লিখে দেওয়ার সঙ্গী। রানী চন্দ লিখেছেন, ২৭শে আষাঢ়, কবি অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে আছেন। কথা বলার অবস্থা নেই। হঠাৎই বললেন- বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা কবিতাটি পড়ে শোনাতে। কন্ঠস্থ, পরিচিত কবিতা কিন্তু ভুলে গেলাম মধ্যিখানে। বলতে শুরু করলেন গুরুদেব- দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা...।'

তিনি যে নিজেই মৃত্যুঞ্জয়ী, তাঁর লেখায় সে ব্যাখ্যা আছে বহুবার। ১৮৭৪ সাল। প্রথমবারের মতো বাবার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে লেখার উপকরণ হিসেবে ছিল কেবল একটা পেনসিল ও পুরোনো লেটস ডায়েরি। মনে নানা রকম ভাবনা আসে। শান্তিনিকেতনের খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতেই কবির মনে হল, গাছের ছায়ায় বসে কবিতা লিখলে অনায়াসে কবিত্ব করা যায়। ভাবনামতো গাছগাছালির ছায়ায় বসে লিখতে শুরু করেন তাঁর কবিতা। কবির সেই সাধের শান্তিনিকেতনে মঙ্গলবার ২২ শ্রাবণ উপলক্ষে সকাল থেকেই উপাসনাগৃহে শুরু হয়েছে উপাসনা। নাচে-গানে বিশ্বভারতীতে চলছে কবি বন্দনা। 

শুধু শান্তিনিকেতনই নয়, মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরনিগমের তরফেও কবিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এদিন নাচ-গানের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের আধিকারিকরা। শেষের কবিতা হোক বা রবীন্দ্রনাথের ছোটো গল্প। পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের বেদনা হয়তো বা কখনও তাঁকে পীড়িত করে থাকতে পারে, কিন্তু মৃত্যুভয়ে ভীত হওয়ার মতো কোনও নিদর্শন তাঁর জীবনের চালচিত্রে কোথাও কখনও ধরা পড়েনি। বরং সাহসভরে তিনি বলতে পেরেছিলেন-কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়"। না হলে কী কবি মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ভানুসিংহের পদাবলীতে সাবলীলভাবে লিখতে পারতেন, 'মরণ রে তুহুঁ মম শ্যামসমান'! 

 'যেতে নাহি দিব'। কিন্তু যেতে তো হবে সবাইকে! সেদিনও ছিল ২২ শ্রাবণ, অস্তমিত রবি। শ্লোক, ব্রহ্মসঙ্গীতে মুখর কবির ঘর। বারোটার ঠিক আগে ডান হাতখানা কাঁপতে কাঁপতে উপরে তুলে কপালে ঠেকানোর আগেই শেষ নিঃশ্বাস কবির। মুহূর্তে যেন স্তব্ধ হয়ে যায় প্রকৃতি। শান্তিনিকেতনে পৌঁছল কবির বিদায়ের বার্তা। যে গান এতদিন গাওয়া হয়নি, কবির অনুরোধে শান্তিনিকেতনে মন্দিরের উপাসনায় সে দিন সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছিল সে গান। কবির চিরযাত্রার এক অমোঘ সঙ্গীত।