ঋতু পরিবর্তনে ঘরে-ঘরে সর্দিকাশি নিত্যসঙ্গী, এই চা-য়ে মিলবে সহজেই মুক্তি

ঋতু পরিবর্তনের দিনগুলিতে শরীর ও স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুব দরকার। কারণ, একটু অনিয়মের ফলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগব্যাধি। যা দীর্ঘমেয়াদি হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। কাজকর্মে অনীহা, ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে। আসুন জেনে নিই দিনের শুরু থেকেই কীভাবে এনার্জিটিক থাকবেন আপনি। রইল কিছু ঘরোয়া টিপস...

ঋতু পরিবর্তনে ঘরে-ঘরে সর্দিকাশি নিত্যসঙ্গী, এই চা-য়ে মিলবে সহজেই মুক্তি
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ক্যালেন্ডার বলছে খাতায় কলমে এখন চৈত্রের শেষবেলা। পুরোপুরি ভাবে গ্রীষ্মের দাপট এখনও সেভাবে দেখা না গেলেও, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা অব্যাহত। আর এই খামখেয়ালিপনায় ঘরে-ঘরে ঠান্ডা, সর্দিকাশি যেন নিত্যসঙ্গী প্রায় সকলের। দিনের বেলায় অত্যাধিক গরমে পুড়ে তেতে একাকার অবস্থা হলেও বেশিরভাগ দিন রাতের তাপমাত্রা কিছুটা নেমে যাওয়ায় ভোরের দিকে অনুভূত হচ্ছে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। এই সময়ে আবহাওয়া আপনার কাছে মনোরম লাগলেও চিকিৎসকরা বলছেন, আগেভাগে ব্যবস্থা না নিলে জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথার মত অসুখের মোক্ষম সময় এটি। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে প্রতিদিন সকালে আপনার পানীয়ে এমন কিছু জিনিস রাখুন যেগুলি সারাদিন আপনাকে যেমন তরতাজা, ফ্রেশ রাখবে তেমনই অনায়াসে ঘায়েল করবে যে কোনও রোগজীবাণু। বাড়িয়ে তুলবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই তালিকায় আপনি, নর্মাল গ্রিন টি (Green Tea) রাখার পাশাপাশি রাখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের মশলা চা বা 'কারা'। কোভিডের সময় এই ধরনের চা বেশ জনপ্রিয় ছিল আমাদের সকলের কাছেই। হালকা গলা ব্যথা বা মাথা যন্ত্রণা, গলা খুশখুশে আপনার জন্য সকালবেলাতেই মুশকিল আসান হতে পারে এই 'মশলা চা' (Spicy Tea)। 

কীভাবে বানাবেন এই মশলা চা? জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন:- 

১:- (গোলমরিচ) শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতে নয়, যে কোনও ঘরোয়া অসুখ থেকে সহজে মুক্তি পেতে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এই গোলমরিচ ব্যবহার করে থাকি। তেমনই শীতকালে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়িয়ে তুলতে প্রতিদিন  চা তৈরির সময় তার মধ্য এক চিমটে (খুব সামান্য পরিমাণ) গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে পারেন। এই মিশ্রণ দিয়ে তৈরি চা আপনার দেহের যেকোনও প্রদাহ, গলা খুশখুশ ভাব, ব্যথা যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণা, ঠান্ডা লাগা ও কাশির থেকে উপশম দেবে। তাহলে আর দেরী কেন? আজ থেকেই সকাল-বিকেল আপনার চায়ে গোলমরিচ যোগ করুন। আর তফাৎ দেখুন। 

২:- (আদা) আমাদের রান্নাঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় এই সবজিটি কিন্তু শীতকালে আপনাকে গলা ব্যথা, শরীর খারাপে দারুণ উপকার দেবে। আদা শুধু রান্নার স্বাদই বাড়িয়ে তোলে না। যে কোনও ঋতুতে আদা চা শরীরকে সুস্থ ও চনমনে রাখে। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি। যা আমাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে। গলা ব্যথা কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই দুই অক্ষরের ছোট্ট সবজি 'আদা'। 

৩:- (এলাচ) এলাচ শুধু আমাদের খাবারের স্বাদই বাড়িয়ে তোলে না। এই মশলাটিতে রয়েছজে ভিটামিন সি, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সুতরাং বলা বাহুল্য, প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যেয় আপনার চায়ে কয়েকটি গুঁড়ো এলাচ যোগ করতেই পারেন। এটি শুধু চা'কে সুস্বাদু করবে না বরং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। 

৪:- (লবঙ্গ) যে কোনও মশলা তৈরিতে সাধারণত লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন এই লবঙ্গ হল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা নিয়মিত চায়ে যোগ করলে অপূর্ব সুন্দর চা তৈরি হতে পারে। এই লবঙ্গ আপনার চায়ে সামান্য তীক্ষ্ণ স্বাদ যোগ করে যা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকরীও বটে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং গ্যালিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ। যা আমাদের হজমকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি যে কোনও ধরনের ফ্লু, সর্দিকাশি এমনকি দাঁতে যন্ত্রণায় সাময়িক স্বস্তি দেয়। 

৫:- (দারুচিনি) 'দারুচিনি' চার অক্ষরের এই মশলা যোগে চা খেলে আমাদের অনেক রোগব্যাধি নিরাময়ে উপকার মেলে।  ঠান্ডার সময় বা অন্য কোনও ঋতুতেও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে দারুচিনি। দারুচিনি বিটা-ক্যারোটিন, আলফা-ক্যারোটিন এবং কোলিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন চা তৈরি করার সময় এক টুকরো দারুচিনি যোগ করলে এটি শুধুমাত্র সুগন্ধযুক্ত পানীয়ই নয় বরং সর্দি, কাশি, ফ্লু এবং গলা ব্যথা নিরাময়েও সাহায্য করবে আপনাকে।