বিক্ষিপ্ত অশান্তিতেই মিটল চতুর্থ দফার ভোট, পঞ্চম-ষষ্ঠে কড়া কমিশন বাড়ছে বাহিনীর সংখ্যা

পঞ্চম দফায় বাড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী তেমনিই বাড়ছে কুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যা। ষষ্ঠ ও সপ্তম দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলোকে প্রায় মুড়ে ফেলতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জানুন আরও...

বিক্ষিপ্ত অশান্তিতেই মিটল চতুর্থ দফার ভোট, পঞ্চম-ষষ্ঠে কড়া কমিশন  বাড়ছে বাহিনীর সংখ্যা
(ফাইল চিত্র)

অভ্রদ্বীপ দাস, কলকাতা: প্রথম তিনদফায় ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটলেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি দিয়েই শেষ হল চতুর্থ দফার ভোট। বর্ধমানের মন্তেশ্বর থেকে কৃষ্ণনগরের বীজপুর। দফায় দফায় উত্তেজনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাংলার একাধিক জায়গা। প্রথম তিন দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রায় সমানে-সমানে ছিল কিউআরটির (Quick ResponseTeam) সংখ্যা।

চতুর্থ দফায় এসে সেই কিউআরটির সংখ্যা একেবারে কমে আসে। প্রথমে জানানো হয়, ১৪৮ সেকশন কিউআরটি থাকবে। তারপর শেষ মুহুর্তে টেনেটুনে করা হয় ১৭১ সেকশন। আর তার ফল একেবারে হাতেনাতেই পেয়ে যায় নির্বাচন কমিশন। দিনভর অশান্তি লেগে থাকে সোমবার। দু জায়গায় আক্রান্ত হতে হয় বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী এ রাজ্যের সমতলের অশান্তির ইতিহাস ভুলে গিয়েছিল নির্বাচন কমিশন? কোথাও কি ছক কষতে ভুল হল তাদের? 

সোমবারের নির্বাচনের পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক কর্তা কার্যত স্বীকার করে নেন যে, কম কিউআরটির জন্যই চতুর্থ দফায় আর বাকি তিন দফার মত শান্তিপূর্ণ হল না। দিনভর চলল অশান্তি। কমিশনের ওই কর্তার আক্ষেপ কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা কম তাই কিউআরটির সংখ্যা চাইলেও বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

তাই, মূলত চতুর্থ দফা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার বাকি তিন দফায় বাড়ানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা। চতুর্থ দফায় আট আসনের জন্য যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৫৭৮ সেখানে পঞ্চম দফায় সাত আসনের জন্য থাকছে ৭৬২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। আবার ষষ্ঠ দফার আট আসনের জন্য থাকছে ১০২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনকি কমিশন সূত্রে খবর, পঞ্চম দফায় থাকতে চলেছে প্রায় এক হাজার সেকশন কিউআরটি। ষষ্ঠ দফায় হাজারের বেশি হতে পারে কিউআরটির সংখ্যা।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/BJP-Leader-Suvendu-Adhikari-blocked-AITC-on-X-handel-page

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিন নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার যে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই হিসেব গুলিয়ে গেল চতুর্থ দফাতেই। এআই-কে কাজে লাগিয়ে একশো শতাংশ ওয়েব কাস্টিংয়ের জন্য বুথের মধ্যে সব ঠিকঠাক থাকলেও বুথের বাইরে এ রাজ্যের নির্বাচনের সেই পুরনো ছবিটাই বারংবার যেন ধরা পড়েছে চতুর্থ দফায়। তাই, বাকি তিন দফায় যেসব জায়গাগুলি রয়েছে জঙ্গলমহল, মেদিনীপুর, হুগলি, আরামবাগ, দমদম, বারাসত,ভাঙড়, বসিরহাট থেকে শুরু করে দুই চব্বিশ পরগনা এবং দুই কলকাতা তা ইতিমধ্যেই কমিশনের কড়া নজরের মধ্যে আছে। বিগত ১০ বছরের ইতিহাস যা বলছে তাতে এইসব এলাকায় ভোট করাতে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। রিগিং, বুথজ্যাম, ছাপ্পা,গুলি, খুন,লাশ,রক্ত থেকে শুরু করে বাদ যায়নি কোনও কিছুই শেষ দশ বছরে। আর সেই অতীতের ইতিহাসকে ঘেঁটে বর্তমানে পা রাখতেই ভবিষ্যতের অঙ্কটা একেবারেই পাল্টে দিতে চায় দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। 

পঞ্চম দফায় এক দিকে যেমন বাড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী অন্যদিকে তেমনিই বাড়ছে কুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যা। ষষ্ঠ ও সপ্তম দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলোকে প্রায় মুড়ে ফেলতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যা সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথমবার ঘটতে চলেছে এই রাজ্যে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জঙ্গলমহল অর্থাৎ ঝারগ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের যে কটি বুথ থাকবে সেখানে প্রতি বুথে এক সেকশান অর্থাৎ আট জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/PM-Narendra-Modi-Files-Nomination-in-Varanasi-on-Lok-Sabha-Election-2024

একটা সময় এই অঞ্চলটাই ছিল মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা যদিও আজ সেই তকমাটা না থাকলেও ইতিহাসটা রয়ে গিয়েছে, তাই ইতিহাসের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে কারণেই কমিশন আগে থাকতেই এইরকম বড় পদক্ষেপ করেছে। আগামী তিন দফার জন্য নতুন স্ট্র্যাটেজিও ছকে ফেলেছে কমিশন। সেই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, ভোট দেওয়ার আগে  বা পড়ে কোনওরকম জমায়েত, জটলা করতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এলাকায় যারা অশান্তি করে থাকেন এরকম ব্যক্তিদের আটচল্লিশ ঘণ্টার জন্য আটক করে রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।