স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও রাস্তা হয়নি পাকা, জমা জলে ধান বুনে প্রতিবাদ এলাকাবাসীর

স্বাধীনতার পঁচাত্তর পার, তবুও মেটেনি সমস্যা। কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবিতে রাস্তার জমা জল কাদায় আমন ধানের চারা রোপণ করে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের।

স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও রাস্তা হয়নি পাকা, জমা জলে ধান বুনে প্রতিবাদ এলাকাবাসীর

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: স্বাধীনতার পঁচাত্তর পার, তবুও মেটেনি সমস্যা। কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবিতে রাস্তার জমা জল কাদায় আমন ধানের চারা রোপণ করে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর।

 স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকা হয়নি। পঞ্চায়েতের তরফে ভুরি ভুরি আশ্বাসের পরেও স্বাভাবিকভাবেই কাঁচা রাস্তা একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। রাস্তা পাকা করার দাবিতে জল থই থই রাস্তায় আমন ধানের চারা রোপণ করে অভিনব ভাবে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে, মালদহের চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিহিপুর এলাকায়।

এদিন গ্রামবাসীরা বেহাল কর্দমাক্ত রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে বিক্ষোভ। পরে এলাকার প্রবীণদের আশ্বাসে বিক্ষোভ স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। 
জানা গিয়েছে, চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিহিপুর গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস। তাদের গ্রামের যাতায়াতের একটি মাত্র রাস্তা। স্বাধীনতার পরে এক টুকরো ইটও পড়েনি গ্রামের রাস্তায়। বর্তমানে বর্ষাকালে বৃষ্টির জেরে গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তা জলে থই থই করছে। সেই জলে চড়ে বেড়াচ্ছে হাঁস। কোথাও কোথাও রাস্তা আবার গর্তে পরিণত হয়েছে। ফলে যে কোনও সময় ঘটতে পারে বড় কোনও দুর্ঘটনা।  

বর্ষাকালে মাটির রাস্তায় চলাচল করতে গ্রামবাসীদের ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়ায় গ্রামে কোনও অ্যাম্বুলেন্স যেতে চায় না বলেও অভিযোগ। প্রসূতি বা রোগীদের চিকিৎসা করাতে গেলে ৪০০ মিটার দূরে গিয়ে রাজ্য সড়কে গাড়ি ধরতে হয়। এই সমস্যা দীর্ঘ কয়েক দশকের। রাস্তাটি পাকা করার দাবিতে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। গত চার মাস আগে চাঁচল-স্বরুপগঞ্জ রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হলে সেই সময় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের তরফে রাস্তা পাকা করার কথা হয়েছিল। তবে বর্ষাকাল শেষ হতে চলল প্রায় কিন্তু ছিটফোটাও কাজ হয়নি।

বিক্ষোভকারী ধনঞ্জয় দাস অভিযোগ করে বলেন, ''ভোট আসে ভোট যায়। ভোটের সময় ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় নেতারা। সব জায়গায় রাস্তা পাকা হলেও ব্রাত্য আমাদের গ্রাম। রাস্তা পাকার করার জন্য এমজিএনআরইজিএসের বোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর হচ্ছে না। বর্ষাকালে চলাচলের পাশাপাশি যেমন দুর্ভোগ, ঠিক তেমনি জমাজলে মশার উপদ্রব বাড়ছে। ফলে রোগের আশঙ্কা রয়েছে। স্বাধীনতার পরেও আজ আমরা কাদা জলে হাঁটছি। এটা ভেবে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। তাই সরব হয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করলাম রাস্তায়। সেটি এখন চাষাবাদের উপযোগী।''

এই ঘটনাকে শাসকদল পরিচালিত চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতকে তীব্র কটাক্ষ করছে বিজেপি। চাঁচলের বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, ''স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও শতাধিক পরিবার জল-কাদা রাস্তায় যাতায়াত করছে। রোগী বা প্রসূতিকে বহু দূরে গিয়ে যানবাহন ধরতে হচ্ছে। এটা লজ্জার। কেন্দ্রীয় সরকার এমজিএনআরইজিস প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে বাংলায়। তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল সহ তৃণমূলের পঞ্চায়েত গুলি। দুর্নীতির দায়ে কেন্দ্র সরকার সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। রাজ্য সরকারের কতটা ক্ষমতা সিহিপুরেই তার প্রমান মিলবে।'' 

তৃণমূল পরিচালিত চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান উৎপল তালুকদার দাবি করে বলেন, ''রাস্তা পাকা করার জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিল আসছে না। তাই কাজের গতিও এগোইনি। অনৈতিকভাবে কেন্দ্র এমজিএনআরইজিএস প্রকল্প বন্ধ রেখেছে। তবে রাস্তা পাকা করা হবে শীঘ্রই। বিজেপি ভুলভাল বকছে।''

 চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে,তা প্রমাণ হলে- মাথা ন্যাড়া ও জুতোর মালা পরে প্রকাশ্যে হাঁটব বলে দাবি করেছেন উপপ্রধান উৎপল তালুকদার। 

চাঁচল-১ নং ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। 
তবে গ্রামবাসীদের হুঁশিয়ারি, এবছর রাস্তা পাকা করা না হলেও আগামীতে পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করবেন তাঁরা।