করমণ্ডল দুর্ঘটনার বলি বহু মানুষ, অতীতেও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সাক্ষী ভারতীয় রেল

২০১৬ সালে ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বহু রেলযাত্রী। জানা গিয়েছিল, কানপুরের পুখরায়নের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেস ১৯৩২১। অন্তত ১৫০ জনের মৃ্ত্যু হয়েছিল আর জখমের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি।

করমণ্ডল দুর্ঘটনার বলি বহু মানুষ, অতীতেও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সাক্ষী ভারতীয় রেল
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ওড়িশার বালেশ্বরে রেললাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে যাত্রীবাহী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৯৫, আহত ৯০০ জনের বেশি। বালেশ্বরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নানা প্রশ্ন, নানা সম্ভাবনার তত্ত্ব উঠে আসছে। সব সম্ভাবনাই একদিকে ইঙ্গিত করছে, রেল দফতরের চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং সমন্বয়ের অভাব। তবে শুধু আজকের করমণ্ডল এক্সপ্রেসই নয়, এর আগেও অতীতে একাধিকবার মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভারতীয় রেল। 

শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিরল জ্ঞানেশ্বরীর স্মৃতি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস, শুক্রবার হাওড়া থেকে ছেঁড়ে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে যাছিল ট্রেনটি। মাঝপথে ঘটে যায় বিপত্তি। তিনটে ট্রেন, তিনটে ট্রাক। বালেশ্বর ও ভদ্রকের মাঝে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার খবর উস্কে দিয়েছে অতীতের বহুবার ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি। ১৯৮১ সালে বিহার ট্রেন বিপর্যয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষ মারা যান। ১৯৯৫ ফিরোজাবাদ রেল বিপর্যয়ে অন্তত ৩৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এমন ছোটবড় বহু দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও রেলমন্ত্রী তার দায় নেননি। এরপর ১৯৯৯ গাইসাল ট্রেন বিপর্যয়ের পর পদত্যাগ করেন আরেক রেলমন্ত্রী। গায়সালের দুর্ঘটনায় ২৯০ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সেনাকর্মী। সেই ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এরপরও বহু মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।

২০০২ হাওড়া-নিউ দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, ২০১০ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বিপর্যয়, ২০১৬ ইন্দোর পাটনা দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয়ে সব মিলিয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে পঞ্জাবের নর্দার্ন রেলওয়ের খান্নার কাছে খান্না-লুধিয়ানা সেকশনে কলকাতাগামী জম্মু তাওয়াই-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে অমৃতসরগামী ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেলের লাইনচ্যুত ৬টি বগিকে। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২১২ জনের। ২০০২ সালে হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। ভারতের দ্রুততম ট্রেন হিসেবে গণ্য করা হয় রাজধানীকে। সেই ট্রেনই ২০০২ সালে পড়েছিল দুর্ঘটনার কবলে। রাত ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ গয়া ও দেহরি-অন-সোন স্টেশনের মাঝখানে রফিগঞ্জ স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনার বলি হয়েছিলেন প্রায় ১৪০ জন যাত্রী।

২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৭০ জন যাত্রী। পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলি এবং সরডিহার কাছে রাত ১টা ৩০ মিনিট নাগাদ ঘটে ঘটনাটি। একটি বিস্ফোরণের জেরে লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছিল মুম্বইগামী হাওড়া কুরলা লোকমান্য তিলক জ্ঞানেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস। এর পর সেটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় একটি মালগাড়ির। রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১৭০ জনের। ২০১২ সালে হাম্পি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটে। অন্ধ্রপ্রদেশের কাছে হুবলি-ব্যাঙ্গালোর হাম্পি এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আগুন ধরে যায়। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়।

এরপর ২০১৬ সালে ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বহু রেলযাত্রী। জানা গিয়েছিল, কানপুরের পুখরায়নের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেস ১৯৩২১। অন্তত ১৫০ জনের মৃ্ত্যু হয়েছিল আর জখমের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। এদিকে শুক্রবারের করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বৈষ্ণবের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তৃণমূলের বক্তব্য রেলের সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট, এমনকী সংঘর্ষ প্রতিরোধের ব্যবস্থাও ছিল না। প্রশ্ন হল বৈষ্ণব কী বলছেন? রেলমন্ত্রী শনিবার ভোররাত থেকেই ঘটনাস্থলে। ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জবাব এড়িয়ে বলেছেন, আপাতত তাঁর লক্ষ্য উদ্ধারকাজ দ্রুতগতিতে শেষ করা। তবে রেল সূত্র বলছে, এই ঘটনার দায় নিয়ে অশ্বিনির পদত্যাগের সম্ভাবনা কার্যত নগণ্য।