প্রধান, অথচ কৃষি শ্রমিক!

অন্যের জমিতে শ্রমিক পঞ্চায়েত প্রধান

প্রধান, অথচ কৃষি শ্রমিক!

বিগত প্রায় আট মাস আগে নদিয়ার শান্তিপুর বাবলা পঞ্চায়েতের রাজাপুকুর গ্রাম থেকে সুস্মিতা মুন্ডা বিজেপির হয়ে ভোটে জিতে সামলাচ্ছেন প্রধানের পদ | আজও কখনও অন্যের জমিতে কখনও বা নিজের সরষে কাটা হোক কিংবা ধান রোয়া, পরিবারের খরচ যোগাতে আজও কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ অব্যাহত।

পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী গোসাই মুন্ডা আগের মতই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান এখনও। একমাত্র সন্তান পড়ে নার্সারিতে | সকাল সাতটার মধ্যে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই গৃহস্থলীর সমস্ত কাজকর্ম করে রান্না সেরে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে পাঠিয়ে দেন স্কুলে। এরপর দু'জনে বেরিয়ে যান দুদিকে কাজে | যদিও প্রতিবেশী আত্মীয়রা ছেলের দেখভাল করে থাকে বাকি দিন। দিনের শেষে সন্ধ্যায় আবার সকলের একত্রিত হওয়ার পালা। প্রধান হয়েও টিনের চাল টিনের বেড়ার ছোট্ট একটি ঘরে বাস | এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানের স্বামী গোসাই মুন্ডা কথায় ভেসে ওঠে কষ্টের জীবনকাহিনী | শুধু বিজেপি করার কারণেই রাজ্যের সরকার তাদের সরকারি গৃহ আবাস যোজনা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন |  শুধু তাদেরকেই নয়, এলাকার বেশিরভাগ প্রান্তিক আদিবাসী পরিবারই সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, নিজেদের কষ্টের মতো অন্যদের যাতে কষ্ট না করতে হয়, সে কারণেই এই অব্যবস্থা পাল্টানোর জন্যই ভোটে দাঁড়ান।

অন্যদিকে এমন প্রধানকে কাছে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ | তাদের কথায়, এমন প্রধান সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় না | নিজে প্রধান অথচ নেই কোনও ঠাট-বাট, কৃষিকাজে সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দেই কৃষিকাজ করেচলেছেন প্রধান সুস্মিতা মুন্ডা |

যদিও পরিবারে অন্য কেউ কখনও ভোটে দাঁড়ায়নি | এক সদস্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল তবে তা বামপন্থী দলের। মূলত গ্রামের মানুষের ইচ্ছাতেই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০ নম্বর বুথে স্ত্রী সুস্মিতা মুন্ডা বিজেপির প্রার্থী হন, শাসক দলের প্রার্থীকে ৬০টি ভোটে পরাজিত করে জয়ী জয়ী হন তিনি।  ২৬টি আসন বিশিষ্ট বাবলা পঞ্চায়েতে  ১০ জন বিজেপি প্রার্থী জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল | কিন্তু তপশিলি উপজাতি মহিলা সদস্যা হিসেবে সরকারি সংরক্ষণ অনুযায়ী, তৃণমূল বোর্ডের মধ্যে তা না থাকার কারণে  প্রধান পদ সামলানোর জন্য ডাক পড়ে সুস্মিতার | তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিজেদের থাকা সত্ত্বেও  নিজেরা নিতে ইচ্ছুক নন এই মুহূর্তে। আগে এলাকার সকলে ঘর পাবে তারপরে নিজেদের জন্য।

তবে শুধু রুজি-রুটির জন্য কাজ কিংবা প্রধান হওয়ার সুবাদে প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোই নয়, বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও মহিলা মোর্চার নেত্রী হিসেবে সংগঠনের কাজও করতে হয় দায়িত্ব নিয়ে। নিজেরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার কারণে এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় কিংবা জাতিগত অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য পরম্পরা ধরে রাখতে আজও টুসু ভাদু গান নাচের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সময় পেলে তাদের সঙ্গেও সমানতালে পা মেলা তিনি।