বঙ্গে ভোটে ভরাডুবিতে নিশানায় শুভেন্দু, বাংলায় মোদি-শাহের লক্ষ্যপূরণ হল না

গোটা দেশে বিজেপির শক্তিক্ষয়ের পাশাপাশি বাংলাতেও বড় ধাক্কা হয়েছে বিজেপির। নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি আসন কাঁথি ও তমলুকে কম মার্জিনে বিজেপি প্রার্থী জিতলেও বাকি একাধিক আসনে হার হয়েছে। জানুন বিস্তারিত...

বঙ্গে ভোটে ভরাডুবিতে নিশানায় শুভেন্দু,  বাংলায় মোদি-শাহের লক্ষ্যপূরণ হল না
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির সাফল্যের গ্রাফ যতটা এগিয়েছিল চব্বিশে পা হড়কে গেল। এক ধাক্কায় কমে গেল ছয়টি আসন। আর বাংলার এই ফল বিপর্যয়ে গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই কাঠগড়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় দলের প্রার্থী তালিকায় শুভেন্দুর পছন্দকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন মোদি—অমিত শাহ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

রাজ‌্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের থেকেও শুভেন্দুর উপর বেশি ভরসা করেছিল দিল্লি। বিরোধী দলনেতার মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই শুভেন্দুর নেতৃত্বে ও পরামর্শে লোকসভা ভোটে রণকৌশল তৈরি করে কার্যত ডুবতে হল বিজেপিকেই। ফলে বঙ্গ বিজেপির পুরনো নেতা—কর্মীরা তো বটেই দিল্লির নেতারাও ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতার উপর। দলীয় সূত্রে এমনটাই খবর। 

গোটা দেশে বিজেপির শক্তিক্ষয়ের পাশাপাশি বাংলাতেও বড় ধাক্কা হয়েছে বিজেপির। নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি আসন কাঁথি ও তমলুকে কম মার্জিনে বিজেপি প্রার্থী জিতলেও বাকি একাধিক আসনে হার হয়েছে। আর যে সব আসনে হার হয়েছে সেখানে বেশিরভাগই শুভেন্দুর পছন্দের প্রার্থীরাই ছিল। বারাকপুরে দল বদল করে আসা অর্জুন সিং, কৃষ্ণনগরে অমৃতা রায়, ঘাটালে হিরণ চট্টোপাধ‌্যায়, মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পাল, বর্ধমান পূর্বে অসীম সরকার, হাওড়ায় ডাঃ রথীন চক্রবর্তী, বসিরহাটে রেখা পাত্র, বারাসতে স্বপন মজুমদার, মুর্শিদাবাদে গৌরিশঙ্কর ঘোষ—সহ আরও কয়েকজন শুভেন্দুর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন বলে দলের অন্দরে খবর।

আরও পড়ুন:  https://tribetv.in/BJP-targets-not-full-filled-in-west-bengal-lok-sabha-election-2024#google_vignette

এদের প্রত্যেককে হারতে হয়েছে। আর বিজেপির বড় ‘লস’ মেদিনীপুর ও বর্ধমান—দুর্গাপুর আসনটি হাতছাড়া হওয়া। দলের প্রাক্তন রাজ‌্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের চেনা মাটি মেদিনীপুর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেদিনীপুর থেকে দিলীপকে সরিয়ে বর্ধমান—দুর্গাপুর আসনে পাঠানো এবং বর্ধমান—দুর্গাপুরের সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়াকে আসানসোলে প্রার্থী করার পিছনে শুভেন্দুরই হাত ছিল বলে দলের অন্দরের খবর। ফলে মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রাকে প্রার্থী করায় সেই আসনে পুরনো বিজেপি কর্মীরা চরম অসন্তুষ্ট ছিল। সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ হয়েছে ভোট বাক্সে। অন‌্যদিকে, আবার বর্ধমান—দুর্গাপুর থেকে বিদায়ী সাংসদ আলুওয়ালিয়াকে সরিয়ে অন‌্যত্র প্রার্থী করার বিষয়টিও দুর্গাপুরের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি বলে খবর। এই দু’টি আসনই হারারর জন‌্য সরাসরি শুভেন্দুকেই দায়ী করছে দলের বড় অংশ।

শুধু তাই নয়, উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির সাফল্যের গ্রাফ যার নেতৃত্বে উঠেছিল সেই প্রাক্তন রাজ‌্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ‘চক্রান্ত’ করেই মেদিনীপুর আসন থেকে অন‌্যত্র শুভেন্দুই পাঠিয়ে ছিলেন বলে দলের আদি অংশের দাবি। দলের মধ্যে দিলীপ ঘোষকে ক্রমশ কোনঠাসা করার ফলও যে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের চব্বিশের ভোটের ফলে পেতে হল বলে মনে করছেন পদ্ম শিবিরের একাংশ। ফলে মেদিনীপুর আসন থেকে দিলীপকে সরানো নিয়েই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার ঝড় উঠেছে দলের মধ্যে। দলের প্রতি আনুগত‌্য মেনে দলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে দিলীপ নতুন আসনে নীরবে লড়তে চলে যান। কিন্তু শুভেন্দু মেদিনীপুর আসন থেকে দিলীপ ঘোষকে না সরালে মেদিনীপুর কেন্দ্রটি বিজেপির হাতেই থাকত বলে মনে করছে দলের বড় অংশ। আর রাজ‌্য বিজেপির সফলতম সভাপতি দিলীপকেও হারতে হত না আনকোরা আসনে গিয়ে।

দলের একাংশের কথায়, একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির আসন বাংলায় বেড়ে ৭৭ হওয়ায় কৃতিত্ব যদি কোনও নতুন ব‌্যক্তি নিতে পারেন, তাহলে এই ব‌্যর্থতার দায়ও তাকেই নিতে হবে। নিশানা যে কার দিকে তা বলা বাহুল‌্য। দিলীপের নেতৃত্বে উনিশের সাফল্যের সঙ্গে শুভেন্দু—সুকান্তদের নেতৃত্বে চব্বিশের ব‌্যর্থতার তুলনাও শুরু হয়ে গিয়েছে দলের মধ্যে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Congress-candidate-adhir-chowdhury-losses-at-berhampur-constituencies

শুধু তাই নয়, দলে শুভেন্দুর ভবিষ‌্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বলে খবর। প্রার্থী বাছাই করা শুধু নয়, রাজে‌্য দলের প্রচারে একাই শ’দেড়েক সভা, রোড শো করেছিলেন শুভেন্দু। দলের এক রাজ‌্য নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি যদি ভাল ফল করত বাংলায় তাহলে সেই কৃতিত্ব একাই নিতে চাইতেন শুভেন্দু। কিন্তু তা মাঠে মারা গেল।’’

রাজ‌্য বিজেপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও কমেন্টে দিলীপ ঘোষকে হারানোর পিছনে দুই নেতা দায়ী বলে মন্তব‌্যও উঠে এসেছে। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারীর উপর চরম ক্ষুব্ধ আরএসএস। কারণ, একাধিক আসনে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের বসিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে আরএসএসের কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি। ফলে চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের বিপর্যয়ে দলের মধ্যেই চাপে শুভেন্দু অধিকারী।