জীবিত শিশুকে 'মৃত' ঘোষণা, কাঠগড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল

জীবিত শিশুকে ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়েই তাকে মৃত ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় হাসপাতাল। তারপর শেষকৃত্য করতে গিয়ে নড়ে উঠল শিশু

জীবিত শিশুকে 'মৃত' ঘোষণা, কাঠগড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল
ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: বার-বার হুঁশিয়ারি দিয়েও মিলছে না ফল। ফের কাঠগড়ায় বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবা। হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় ৮ ঘণ্টা ফেলে রাখার পর 'জীবিত শিশুকে' মৃত বলে ঘোষণা। কাঠগড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। অভিযুক্ত চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতের পরিবার।  

জানা গিয়েছে, জীবিত শিশুকে ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়েই তাকে মৃত ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় হাসপাতাল। তারপর শেষকৃত্য করতে গিয়ে নড়ে উঠল শিশু। কাঠগড়ায় খোদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহাকুমার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সূত্রের খবর, অপরিণত শিশুর পরিস্থিতি দেখে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে দেয় ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। বাড়িতে ফিরে সমাধি দেওয়া প্রস্তুতি শুর হয়। শোকের পরিবেশ হঠাৎ দেখা যায়, শিশুটি নড়ছে ও শ্বাস নিচ্ছে। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কিছুক্ষণ পরে মারা যায় শিশুটি। এরপরই হাসপাতালের চিকিত্সকদের গাফলিতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় পরিবারের সদস্যরা।  তড়িঘড়ি ব্যাবস্থা নেয় স্বাস্থ্যদফতরও।  

জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ''তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের গাফিলতি আমরা মেনে নিতে পারি না।'' 
পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বড়ডিহার বাসিন্দা সন্তান সম্ভবা মোনালিয়া বিবি ৭ এপ্রিল ভর্তি হয়েছিলেন ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে ৮ এপ্রিল দুপুরে একটি অপরিণত শিশুর জন্ম দেন তিনি। চিকিত্সকদের ব্যাখ্যা, শিশুটি ২২ সপ্তাহে জন্মেছিল, ৪৪০ গ্রাম ওজনের ছিল,শারিরীক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তাঁকে এসএনসিইউতে ভর্তি করা হয় শনিবার বিকেল ৫ টা নাগাদ পরিস্থিতি দেখে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় বলে পরিবারের দাবি।

জানা গিয়েছে,পরিবারের লোকেরা শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে চলে যায়। রাতে ওই নবজাতকের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি শুরু হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষকৃত্যের কিছুক্ষণ আগে বাচ্চাটি নড়ে ওঠে ও শ্বাস নিতে দেখা যায়। এরপরই দ্রুত তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় শিশুটি। ঘটনায় হাসপাতালের চিকিত্সকদের গাফলতি বলে দাবি করে বিক্ষোভ শুরু হয় পরিবার ও স্থানীয়দের। রবিবার সকাল থেকে ফের পরিবারের লোকেরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এই বিক্ষোভ শামিল হয় বিজেপিও। সেখানে হাজির হন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। তাঁর দাবি, ''অবিলম্বে চিকিৎসক ও সুপারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যাবস্থা নিতে''।

এদিকে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কী ভাবে জীবিত একটা বাচ্চাকে মৃত বলে ঘোষণা  করতে পারে ডাক্তার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ''বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে শুনেছি। শিশুটি অপরিনত ও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ছিল। বাঁচানোটাও চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এই সার্টিফিকেট ইস্যু করাটা যে গাফিলতি তা মেনে নেওয়া যায় না। তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে দায়িত্বে থাকা চিকিত্সকের বিরুদ্ধে।''