ট্র্যাফিক সামলে কচিকাচাদের অঙ্ক শেখাচ্ছেন হীরালাল

এলাকায় সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার অনেকেরই সমর্থ্য নেই। সেই সমস্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়াশোনা শেখান সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরা। জানুন বিস্তারিত...

ট্র্যাফিক সামলে কচিকাচাদের অঙ্ক শেখাচ্ছেন হীরালাল
নিজস্ব চিত্র

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: 'একই অঙ্গে বহু রূপ' একথা শুধুমাত্র মেয়েদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। পুরুষদেরও সামাল দিতে হয় একাধিক দিক। ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলে পাটকাঠির পাঠাশালায় ছোটদের পড়ান সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরালাল। শিক্ষক হীরালালের হাত ধরে একটু ভালোভাবে পড়াশোনা শেখার উৎসাহ পেয়েছে ছোট ছোট পড়ুয়ারা। বলাগড়ের এই সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজের প্রশংসায় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশও।  

হুগলির বলাগরের নাটাগরে এসটিকেকে রোডের উপর প্রতিদিন তাঁকে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলাতে হয়। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যান-নিয়ন্ত্রণ করেন। মানুষকে রাস্তা পারাপার করতে সাহায্য করেন। নাটাগড় এলাকাটি মূলত আদিবাসী মানুষের বাস। এই এলাকায় সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার অনেকেরই সমর্থ্য নেই। সেই সমস্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়াশোনা শেখান সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরা। রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি করেছেন একটি চালা ঘর। সেখানেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া স্কুলে যাবার আগে পড়াশোনা করতে আসে। কিছুটা সময় পড়ানোর পর ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধরে রাস্তা পার করে স্কুলে যেতে সাহায্য করেন হীরা।  

আরও পড়ুন:  https://www.tribetv.in/A-Housewife-made-a-Durga-structure-by-sugarcane-at-Bankura

হীরার পাঠশালা নামে পরিচিত হয়েছে পাটকাঠির ঘর। স্কুলে মিড ডে মিল পায় পড়ুয়ারা। হীরার পাঠাশালায় পড়া শেষে পড়ুয়ারা পায় বিস্কুট আর লজেন্স। তাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে খুদেরা। 

২০১০ সালে বলাগড় কলেজ থেকে বিএ পাস করেন হীরালাল সরকার। এরপর হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বলাগড় থানার সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজ পান। সকালে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সবজির ব্যবসায় হাত লাগান। তবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল থাকেন। এক সময় ভালো ক্রিকেট খেলতেন। আরজি কর কাণ্ডে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক নেগেটিভ প্রচার হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে। এখানে ফুটে উঠল একেবারে উল্টো ছবি। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Panchayat-head-has-been-accused-of-hiding-government-relief

হুগলি গ্রামীন পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র বলেন, সবাই খারাপ হয় না সেটা হীরালকে দেখলেও বোঝা যায়। ও চেষ্টা করছে ছোটোদের শিক্ষিত করার। কিছু পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এই চেষ্টাটাই তো মহৎ। ও গত ছয় মাস ধরে নিজের চেষ্টায় এই পাঠশালা গড়ে তুলেছে। উদ্দেশ্যই হলো ছোটোদের শিক্ষিত করা। আমরা ওর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। হুগলি গ্রামীন পুলিশের সুপার কামনাশিস সেন নিজেও এই ধরনের কাজ পছন্দ করেন। তাই গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে হীরাকে শুভেচ্ছা জানাই। ওসি বলাগড় রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় ডিএসপি ক্রাইম হীরালালকে তার কাজের জন্য থানায় ডেকে সম্বর্ধনা দেন।