প্রেমে প্রত্যাখ্যান, প্রকাশ্যে ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন যুবকের

নদিয়ার হোগলবাড়িয়া থানা এলাকার সুন্দলপুর মৈত্র পাড়ার যুবক ব্রজেন মন্ডলের সঙ্গে বছর তিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রতিবেশী কিশোরী সোনালী চক্রবর্তীর।

প্রেমে প্রত্যাখ্যান, প্রকাশ্যে ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন যুবকের
কান্নায় ভেঙে পড়েছে মৃতার পরিবার (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: প্রতিদিনের মতো টিউশনে যাওয়ার জন্য এক বান্ধবীর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। মাঝ রাস্তার শুনশান জায়গায় ওৎ পেতে ছিলেন প্রেমিক। সেখানে পৌঁছতেই প্রেমিকার উপর চড়াও হয়ে ধারালো অস্ত্রের এলোপাথাড়ি কোপ। কয়েক মিনিটের মধ্যে রক্তে ভেসে  যায় রাস্তা। ছাত্রীর গোঙানিতে আশপাশ থেকে ছুটে আসে লোকজন। সেখান থেকে গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত প্রেমিক। তড়িঘড়ি ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়, করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ছাত্রী মৃত বলে ঘোষণা করে। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই  থানায় আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত প্রেমিক। মৃতা ছাত্রীর নাম সোনালী চক্রবর্তী ( ১৭)। ওই ছাত্রী জমশেদপুর উচ্চ বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া। ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তেজিত গ্রামবাসী অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পুড়ে ছাই হয়ে যায় অভিযুক্তের বাড়ি।

পুলিশ সূত্রে খবর, নদিয়ার হোগলবাড়িয়া থানা এলাকার সুন্দলপুর মৈত্র পাড়ার যুবক ব্রজেন মন্ডলের সঙ্গে বছর তিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রতিবেশী কিশোরী সোনালী চক্রবর্তীর। বছরখানেক আগে থেকে সম্পর্কের অবনতি হয়। ঝামেলা গড়ায় থানা পর্যন্ত। এর আগে থানায় বসে সালিশির মাধ্যমে মিটমাট হয়ে যায় বিষয়টি। জানা গিয়েছে, তারপর থেকে কিশোরী ওই যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী ছিল না। প্রেমিকা সোনালিকে ছাড়তে নারাজ ব্রজেন। বারবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও পাত্তা দিতে রাজি হয়নি প্রেমিকা। এই নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিল ওই যুবক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮'টা নাগাদ সুন্দলপুর থেকে করিমপুরে টিউশন পড়তে আসছিল ওই ছাত্রী। সে সময় চরকতলা মোড়ে ওৎ পেতেছিল ব্রজেন। কাছাকাছি আসতেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে সোনালীর উপরে চড়াও হয় ব্রজেন। পরপর এলোপাথাড়ি  কোপে লুটিয়ে পড়ে ছাত্রী। ছাত্রীর চিৎকারে ছুটে আসেণ স্থানীয় লোকজন। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল থেকে গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত যুবক। ছাত্রীকে উদ্ধার করে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

এদিকে এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই হোগলবাড়িয়া থানায় আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত যুবক ব্রজেন মন্ডল। প্রেমে প্রত্যাখ্যানজনিত কারণে মানসিক অবসাদ থেকে এই খুন বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের। মৃত্যুর কারণ জানতে ছাত্রীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জোসনা সরকার বলেন, "বাড়িতে কাজ করছিলাম হঠাৎ বিকট শব্দ আর একটি মেয়ের চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখি একটি ছেলে ওই মেয়েটিকে দা দিয়ে কোপাচ্ছে। আমি ছুটে যেতেই ছেলেটি ছেড়ে পালিয়ে গেল। গিয়ে দেখি মেয়ে এবং ছেলে দুজনেই আমার চেনা"। মৃত ছাত্রীর বাবা স্বপন চক্রবর্তী বলেন, "আমার মেয়েকে ওই ছেলে নিয়মিত উত্যাক্ত করত। এই  নিয়ে আগেও থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তবে এভাবে খুন করবে ভাবতে পারিনি। আমি ওর ফাঁসি চাই।''