বেড থেকেই চুরি যাচ্ছে রোগীর ভাত, কাঠগড়ায় সরকারি হাসপাতাল

নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জের গ্রামীন হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ভাত পাচ্ছেন না  রোগীরা।

বেড থেকেই চুরি যাচ্ছে রোগীর ভাত, কাঠগড়ায় সরকারি হাসপাতাল
অভিযোগকারী রোগী (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: চাকরি চুরি, কয়লা চুরি ,বালি চুরি, পাথর চুরি। এবার নতুন সংযোজন রোগীর ভাত চুরি! ঘটনা অবাস্তব মনে হলেও একেবারে সত্যি ঘটনা। নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জের গ্রামীন হাসপাতালের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ভাত পাচ্ছেন না  রোগীরা। শুধু ভাত নয় জল খাবারটাও চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্বয়ং রোগীর পরিবারের লোকেরা। বেশ কিছুদিন যাবৎ কারেন্ট চলে গেলে অন্ধকারে থাকে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল। আগেই প্রকাশিত হয়েছে সেই খবর। এবার হাসপাতালের ভিতর থেকে ভাত চুরির অভিযোগ তুললেন রোগীরা। 

হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের অভিযোগ, বড় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুদিনের মধ্যে একটা ডাক্তারও দেখতে যাননি রোগীকে। হাসপাতালে থাকা এক রোগীর অভিযোগ, তার জ্বর কমে গিয়েছে। বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে রয়েছে তখন তিনি চিকিৎসককে জানান তাকে ছুটি দেওয়ার জন্য। চিকিৎসক জানান ছুটি তার হবেনা। রোগীর অভিযোগ, সে তখন জানান তাঁকে ছুটি দেওয়া না হলে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে যাবেন। এরপরই চিকিৎসকরা পাল্টা তাঁকে জানান,  স্বইচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চাইলে লিখিত দিয়ে যেতে হবে। তবে লিখিত দেওয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও কাগজ দেবে না বলে জানিয়েছে,। 

 এ ব্যাপারে কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক আশীষ কুমার বিশ্বাস বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার নিজের দফতরের এই দশা। রোগীরা খাবার পান না। পাশাপাশি হাঁসখালির বগুলা গ্রামীন হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে খাবার সরবরাহ চলছে সব নিয়ম মেনেই। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামো অনেক ভালো। তাহলে কি কৃষ্ণগঞ্জ হাসপাতলে ও  কোন দুর্নীতির জাল বিস্তার করছে? আবার মুখ্যমন্ত্রী গর্ব করে বলছেন তিন বছরে ডাক্তার দেড় বছরে নার্স দেবেন। হাসপাতালের এই করুণ দৃশ্য দেখে সবাই হতবাক।'' এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক শিবনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''মানুষের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ টাকায় মা ক্যান্টিনে ডিম ডাল ভাতের ব্যবস্থা করা হয়। তবে কি রাজনীতির ফায়দা তুলতে না পারার জন্য হাসপাতালে রোগীরা ভাত পাচ্ছেন না?''  কৃষ্ণগঞ্জের বিডিও কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অথচ তিনিও এই হাসপাতালের কমিটিতে রয়েছেন। এমনিতেই হাসপাতালে গেলে দেখা যায় কুকুরে কামড়ালে বিড়ালে কামড়ালে ইঞ্জেকশনের সিরিজ কিনে এনে দিতে হয় বাইরে থেকে রোগীর পরিবারকে। এবার হাসপাতালে অসুস্থ রোগীরা খাবার থেকে বঞ্চিত। 

 কৃষ্ণগঞ্জ তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অশোক হালদার জানিয়েছেন, তিনি নাকি এই ঘটনা জানতেন না। আজ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। পাশাপাশি তিনি জোড়ের সঙ্গে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সমস্ত মানুষের কথা চিন্তা করেন তখন কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীদের প্রতি যে ভাবে খাদ্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে তার তিনি নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ''এর আসল কারণ কি সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সব হাসপাতালের ক্ষেত্রে খাবার চলছে একটা হাসপাতালে খাবার বন্ধ । এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সম্পূর্ণ গাফিলতি রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের।''

 পাশাপাশি তিনি বলেন, ''এটা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তবে এটা আমাদেরও বলতে দ্বিধা নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস। বিরোধীরা যতই যা বলুক না কেন তিনি সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করেন। তিনি যদি করতেন সমস্ত হাসপাতালের জন্যই খাবার বন্ধ করতেন। কিছু সরকারি কর্মী মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করবার জন্য এ ধরনের কাজ করছেন কিনা ভাবার সময় এসেছে। আশা করি স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপে এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। যদি কেউ দোষী হয় তার শাস্তি অবধারিত।''