প্রায় ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলায় উপচে পড়া ভিড়

যে সবচাইতে বড়ো মাছ বিক্রি করবেন তার নাম সেরার তালিকায়

প্রায় ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলায় উপচে পড়া ভিড়

রাঘব বোয়াল থেকে চুনো পুটি, শুটকি কি না পাওয়া যায় এখানে। রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা ভেটকি, কাঁকড়া, শংকর মাছ, কি নেই এই মেলায়। সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলায়। চুনোপুটি থেকে ৫০ কিলো পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয় এই ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলায়। 

চৈতন্য মহা প্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তার বাড়িতেই বসে ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলা। একদিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন বিভিন্ন দোকানিরা। মেলার সূত্রপাত হয় গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরই। ওই এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তারই ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নেবেন বলে, তিনি মহাপ্রভূ চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দিক্ষা নেবেন বলে তার কাছে যান পানিহাটিতে। তবে তার বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর হওয়াতে তাকে তিনি দিক্ষা দেননি। তবে তার ভক্তির পরিক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন নিত্যানন্দ। দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফেরে সে। সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের মানুষ তার ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়া আবদার করেন।তিনি ভক্তদের বলেন, বাড়ির পাশে আম গাছ থেকে জোড়া আম পেড়ে আনতে এবং পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতে। সেই অনুযায়ী জাল ফেলতেই মেলে জোড়া ইলিশ ও আম আনতেই অবাক হয়ে যান গ্রামের মানুষ। তাই থেকে প্রতি বছর ভক্তরা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করে। সেই থেকেই পয়লা মাঘ উত্তরায়ন মেলা চলে আসছে।

এদিনের মেলায় স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদার এই মেলা পরিদর্শনে আসেন।

অবশ্য এই মেলায় দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী, পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে বিক্রি করেন। রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা ভেটকি, কাঁকড়া, শংকর মাছ, কি নেই এই মেলায়। সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলায়। চুনোপুটি থেকে ৫০ কিলো পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয় এই ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলায়। পাশাপাশি আরো শোনা গিয়েছে, মৎস ব্যবসায়ীদের মধ্যে যদি কেউ সবচাইতে বড়ো মাছ নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য তবে তার নাম সে বছরের সেরা তালিকায় উঠে আসে। 

হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় আসেন। ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি মাছ বিক্রি হয়। শুধু মাছ কিনেই নিয়ে যায় না।অনেকেই পাশের আম বাগানে মাছ ভেজে পিকনিকের আয়োজনও করে নেয়।

তবে এবছরের মেলায় যে মানুষের ভিড় উপচে পড়ার মতো তা বলাই বাহুল্য। বহু মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এখানে বিভিন্ন ধরণের মাছ কিনতে আসছেন।  এমনি অনেকে আবার এখানেই ছোট্ট করে পরিবারের সঙ্গে বনভোজনও সেরে নিচ্ছেন।